গরমের প্রচণ্ড দাবদাহে শরীর ঠান্ডা রাখতে তরমুজের তুলনা নেই। এটা শুধুমাত্র তৃষ্ণা মেটানোর জন্য নয়, শরীরের স্বাস্থ্যের জন্যও ভীষণ উপকারী। এই সুস্বাদু ফলে প্রায় ৯২ শতাংশ জল থাকে, যা শরীরে জলশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। তাছাড়া, তরমুজে থাকা বিশেষ কিছু অ্যামাইনো অ্যাসিড নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করে, যা রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
তরমুজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে, যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এতে উপস্থিত বিটা ক্যারোটিন চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। প্রতিদিন মাত্র দু'কাপ তরমুজ খেলে শরীরের দরকারি ভিটামিন এ-এর চাহিদা পূরণ হয়। এছাড়াও, তরমুজের রস বা জুস পান করলেও একই উপকারিতা পাওয়া যায়, যা শরীরকে সতেজ ও উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখতেও এটি কার্যকরী, কারণ এতে থাকা ভিটামিন এ ত্বককে ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে।
তরমুজে বিদ্যমান ভিটামিন বি৬ ও ভিটামিন বি১ শরীরে শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে, যা সারাদিন চনমনে থাকতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, এতে থাকা ভিটামিন সি কোলাজেন গঠনে সাহায্য করে, যা ত্বক, চুল ও হাড়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দু'কাপ তরমুজ খেলে প্রায় ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সহায়ক।
তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে, যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করে। পটাশিয়াম শরীরের তরল ও খনিজের ভারসাম্য বজায় রাখে, যা কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে। ২ কাপ তরমুজে প্রায় ৩৫০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে, যা হৃদযন্ত্রের জন্যও উপকারী।
তরমুজে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যেমন লাইসোপিন ও সিট্রুলিন আছে, যা শরীরের কোষগুলোকে ফ্রি র্যাডিকেলসের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। ফ্রি র্যাডিকেলস রক্তনালিতে কোলেস্টেরলের স্তর তৈরি করতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তরমুজ হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে এবং অ্যাজমা ও বাতের ব্যথা কমাতেও কার্যকরী।
তরমুজের খোসাও ভীষণ উপকারী, বিশেষত ক্যানসার রোগীদের জন্য। গবেষণায় দেখা গেছে, তরমুজের সবুজ খোসায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া, এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও ভালো, কারণ এতে প্রাকৃতিক চিনি থাকলেও তা রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করে না।
এছাড়া, তরমুজের বীজও শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে ফাইবার ও দরকারি খনিজ রয়েছে, যা হজম ক্ষমতা উন্নত করে ও অন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ায়। তাই, শুধু তরমুজের রস বা লাল অংশই নয়, এর খোসা ও বীজও ব্যবহার করা উচিত।
সব মিলিয়ে, তরমুজ শুধুমাত্র একটি সুস্বাদু গ্রীষ্মকালীন ফল নয়, এটি আমাদের শরীরের জন্য এক সম্পূর্ণ পুষ্টিকর খাবার। তাই, গরমের দিনে শরীরকে সতেজ ও সুস্থ রাখতে নিয়মিত তরমুজ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
আমাদের রেসিপি তে যদি কোন ত্রুটি থাকে বা আপনি যদি কোন কিছু সংযোজন বা সংশোধন করতে চান নির্দ্বিধায় পোষ্টে কমেন্ট (মন্তব্য) করে জানাতে পারেন।